ব্যাপক বিষয় সম্বলিত হাদীস

 ১৮৩। হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেন- আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে হাজির ছিলাম, এমন সময় সাদা ধবধবে পোষাক পরা ও কালো কুচকুচে চুলওয়ালা একজন লোকের আবির্ভাব হ’ল। তাঁর মধ্যে ভ্রমণের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে থেকেও কেউই তাঁকে চিনতে পারছিল না। হুজুরের দুই হাঁটুর সাথে নিজের দুই হাঁটু মিলিয়ে ও তাঁর (হুজুরের) দুই উরুর উপর দুই হাত রেখে বললেন- “হে মুহাম্মদ ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। হুজুর (সাঃ) বললেন- ইসলাম হ’ল, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ’র রাসূল’ তুমি এই কথার সাক্ষ্য দেবে এবং নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযান মাসের রোযা রাখবে এবং পৌঁছানোর সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ’র হজ্জ করবে। তিনি (আগন্তুক) বললেন- আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা আশ্চর্য হলাম (একারণে যে) তিনি প্রশ্ন করেছেন, আবার তিনিই সমর্থন করছেন। তিনি আবার বললেন – আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। তিনি (হুজুর) বললেন – তুমি আল্লাহ’র প্রতি, ফেরেস্তাগণের প্রতি, কেতাব সমূহের প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, আখেরাতের দিনের প্রতি ও ভাগোর ভালমন্দের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করবে। তিনি (আগন্তুক) বললেন- -আপনি ঠিক বলেছেন। তিনি আবার বললেন- আমাকে এহসান সম্পর্কে বলুন। তিনি (হুজুর) বললেন- তুমি এমনভাবে আল্লাহ’র ইবাদাত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাকে না দেখতে পাও, তবে (মনে করবে) তিনি তোমাকে দেখছেন। তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন – আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন। তিনি (হুজুর) বললেন- এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর থেকে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি জানে না। তখন তিনি (আগন্তুক) বললেন-তবে তার লক্ষণগুলো বলুন। তিনি (হুজুর) বললেন—যখন দাসী তার প্রভূকে জন্ম দেবে এবং যখন খালি পা, খালি গা রাখালদের বড় বড় অট্টালিকা নিয়ে বড়াই করতে দেখতে পাবে। অতঃপর তিনি (আগন্তুক) চলে গেলেন। এরপর দীর্ঘ সময় পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন- হে ওমর! তুমি কি জান প্রশ্নকারী কে ছিলেন ? আমি বললাম- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন- তিনি ছিলেন জিব্রাইল (আঃ)। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।’- (মুসলিম) 

ব্যাখ্যা : এই হাদীসকে ‘হাদীসে জিবরীল’ বলে। ইসলামের মূল বিষয়ের বর্ণনা থাকার কারণে একে ‘উম্মুল আহাদীস’ ও বলা হয়। এই পুস্তকে ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে আগেই অন্যান্য হাদীসের ব্যাখ্যাতে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।

‘এহসান’ শব্দের মূল হ’ল ‘হুসন’, যার অর্থ সুন্দর, ইসলামে এর অর্থ হ’ল অন্যের উপকার করা, কাজকে সুন্দরভাবে করা, একাগ্রতা ও গভীর মনোযোগের সাথে আল্লাহ’র ইবাদাত করা। ‘যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো? এটা হল এহসানের সর্বোচ্চ স্তর। ‘তিনি তোমাকে দেখছেন’, এটা হ’ল এহসানের দ্বিতীয় স্তর। বান্দা যখন এই অনুভূতির সাথে আল্লাহ’র ইবাদাত করে যে, তাঁর প্রভৃ আল্লাহ তার সামনে রয়েছেন এবং তাঁর প্রতিটা কাজ ও তৎপরতা তিনি নিজে দেখছেন এবং তিনি নিজেই তাঁর সব ভালমন্দ কাজের প্রতিফল দেবেন, তখন তার মধ্যে একাগ্রতা ও গভীর মনোযোগ পয়দা হতে বাধা।

বিভিন্ন হাদীসে কেয়ামতের বহু আলামত বা চিহ্নের উল্লেখ রয়েছে। এখানে দুটো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। “দাসী তার প্রভুকে প্রসব করবে ” এর অর্থ হ’ল সন্তান তার নিজের মায়ের সাথে দাসীর মত ব্যবহার করবে। “খালি পা, খালি গা রাখালগণ বড় বড় অট্টালিকা নিয়ে বড়াই করবে” এর অর্থ হ’ল নিম্ন শ্রেণীর ও স্বভাব চরিত্র ও শিক্ষা এবং সভ্যতায় অনুন্নত বর্বর ধরনের লোকেরা বৈধ্য অবৈধ যে কোন উপায়ে অর্থ সঞ্চয় করবে এবং বড় বড় বাড়ী তৈরির প্রতিযোগিতাতে নামবে। আর্থিক সচ্ছলতা সত্ত্বেও তাদের নৈতিকতার মান হবে অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ের।

Leave a Comment